মানব সভ্যতা অনেকটা দূর এগিয়ে গেলেও এখনও গোটা পৃথিবীতে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা অগুনতি। শুধুমাত্র না খেতে পেয়ে অগুনতি মানুষ মারা যাচ্ছেন পৃথিবী জুড়ে। যদিও সার্ভে রিপোর্ট বলছে প্রায় ৯৩১ মিলিয়ন টন খাদ্য নষ্ট হয়েছে শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই।
একদিকে অভুক্ত মানুষের মৃত্যু মিছিল অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যের বিনা ব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাওয়া। এই দুইয়ে মিলে এক অস্বস্তিকর তথ্য সামনে এসেছে। ফুড ওয়াস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট ২০২১ প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড ন্যাশনের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম। আর তাতে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৯৩১ মিলিয়ন টন খাদ্য নষ্ট হয়ে ডাস্টবিনে স্তূপীকৃত হয়েছে। এই খাবারগুলো হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা কোন উৎসব অথবা অনেকে বাড়িঘর থেকেই ফেলে দেওয়া হয়েছে ডাস্টবিনে। তথ্য বলছে ভারতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাশস্য, তৈলবীজ, আখ এবং হর্টিকালচার উৎপাদনের সমান পরিমাণের এই নষ্ট হওয়া খাবারের পরিমাণ।
রিপোর্টে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে যেখানে বলা হচ্ছে গ্লোবালি খাবার নষ্টের পার ক্যাপিটা লেভেল ১২১ কেজি। গোটা দুনিয়ার মানুষ ৫.৩ বিলিয়ন টন খাবার ব্যবহার করেন যার মধ্যে ১৭ শতাংশই জায়গা হয় ডাস্টবিনে। সাউথ এশিয়ার দেশগুলোতে বাড়ি পিছু ৫০ কেজি খাবার নষ্ট হয়। যে তুলনায় প্রতিদিন ৮২ কেজি হয় আফগানিস্থানে। ৭৯ কেজি নেপালে, ৭৬ কেজি শ্রীলঙ্কায়, ৭৪ কেজি পাকিস্থানে এবং ৬৫ কেজি খাবার নস্ট হয় বাংলাদেশে। ইউনাইটেড ন্যাশনের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, শুধুমাত্র ২০১৯ সালে ৬৯০ মিলিয়ন মানুষ অভুক্ত ছিলেন যা অতি মারি পরিস্থিতি চলার সময়ে আরও কয়েকগুণ বাড়ার সম্ভাবনা। রিপোর্টে বলছে, যে খাবার নষ্ট করার প্রবণতা শুধুমাত্র যে ধনী দেশগুলোতে রয়েছে তা নয়। গরিব নিম্ন মধ্যবিত্ত রোজগেরে দেশগুলোর মধ্যেও এই প্রবণতা সমান। তবে সমাজকর্মী চাইছেন এবার একটা সুরাহা হোক। এভাবে খাবার নষ্ট হওয়ার প্রবণতা বন্ধ হোক। গোটা দুনিয়া জুড়ে পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। যাতে করে অন্তত অভুক্ত মানুষগুলোর মুখে কিছুটা হলেও খাবার তুলে দেওয়া যায়।
মানুষ যদি খাবার ডাস্টবিনে না ফেলে সংরক্ষণ করে এবং অভুক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার কোনও প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্টভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করেন তাহলে সেটাই হবে মানব কল্যাণে সব থেকে বড় উদ্যোগ। বিভিন্ন এনজিও এই উদ্যোগ নিলেও সাফল্য না মেলায় বন্ধ করে দিয়েছে এই কাজগুলো। ফের নতুন করে ভাবার প্রয়োজন হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।